নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বর্তমান বাংলাদেশের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সরকারের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তর বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। মানুষের মাঝে সামাজিক যোগাযোগ উন্নয়নে বেশ গুরুত্ব রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির। ফলে টেলি যোগাযোগ, ইন্টারনেট প্রযুক্তিসহ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আরও ঢেলে সাজাতে নানামুখী উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। সারা দেশের ন্যায়, বরিশাল বিটিসিএল কার্যালয়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও অবকাঠামো আর পরিবেশ রয়ে গেছে সেই আগের মতই। নেই কোন উন্নয়ন কার্যক্রম। কার্যালয়ের বাহিরের পরিবেশ একেবারেই জরাজীর্ণ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে কার্যালয়ের চার পাশে জন্মেছে বড় বড় ঘাস। শ্যাওলা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল ভবন। ফলে দূর থেকে দেখলে মনে হয় জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে শত বছরের পুরানো কোন পরিত্যক্ত ভবন।
তার ওপর চলতি বর্ষা মৌসুম আর জোয়ারের পানির কারণে আরও বেহাল হয়ে পড়েছে নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ সড়কের বিটিসিএল উপ-মহা ব্যবস্থাপকের এ কার্যালয়টি। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে কার্যালয়ের চার পাশে জমে আছে হাঁটু সমান পানি। কার্যালয়ে প্রবেশ কিংবা বাহির হতেও ভিজে যেতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গ্রাহকদের। শুধু তাই নয়, জরাজীর্ণ বিটিসিএল কার্যালয় চত্বরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রপ। আর এ থেকে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগের সংক্রমণ ঘটারও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এমন পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন গ্রাহকরা। তাদের সুষ্ঠু তদারকি এবং নজরদারির অভাবে বরিশাল বিটিসিএল কার্যালয়ে এমন ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিনে নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ সড়কে বিটিসিএল কম্পাউন্ডে প্রবেশের প্রধান ফটকে দাঁড়াতেই চোখে পড়ে যায় দুর্ভোগের চিত্র। গেট থেকে গার্ড রুম পর্যন্ত মাত্র কয়েক ফুট জায়গা বাদে বাকি সকল জায়গা জুড়ে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। কার্যালয়ের পুরো ভবন জুড়ে বিভিন্ন পরগাছা আর লতাপাতা জড়িয়ে আছে। পুরো ভবনেই জন্মেছে শ্যাওলা।
তাছাড়া বড় বড় ঘাস জন্মেছে বিটিসিএল চত্বরে। সেখানেই আবার পানি জমে আছে হাঁটু সমান। এ কারণে ভেতরে থাকা সরকার দলীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত সিবিএ কার্যালয়টিও বন্ধ হয়ে গেছে। বিটিসিএল কার্যালয়ে কোনভাবে প্রবেশ করা সম্ভব হলেও পানি আর অপরিচ্ছন্নতার অভাবে ওই কার্যালয়ে প্রবেশ করা একেবারেই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া একই স্থানে থাকা হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একই অবস্থা। ওই কার্যালয়ে প্রবেশের জন্য নেই আলাদা কোন রাস্তা। জঙ্গলের মধ্যে থেকেই কার্যালয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গ্রাহকদের। ফলে সার্বক্ষণিক বিষাক্ত সাপসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের ভয়ে থাকতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
এমন চিত্র শুধুমাত্র বাহিরেই নয়, বরং বিটিসিএল কার্যালয়ের ভেতরেও একই অবস্থা। রয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব। কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে মাকড়সার জাল জড়িয়ে আছে ভবনের চারিপাশ। কেবল্গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারদিকে। ময়লা আবর্জনা জমে কোন কোন জায়গা পরিুত হয়েছে ভাগাড়ে। বিটিসিএল উপ-মহা ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক সহকারী মো. ইমরান বলেন, ‘মূলত আমাদের এখানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাব রয়েছে। আমাদের এখানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দুটি পদে চারজন কাজ করতেন। কিন্তু তারা কেউ বরিশালে নেই। বরিশাল থেকে তারা বেতন-ভাতা উত্তোলন করলেও সংযুক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খুলনায়। ফলে এখানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত বিটিসিএল শ্রমিক কর্মচারী লীগ- সিবিএ’র সভাপতি আশরাফ আলী মৃধা বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা দায়িত্ব পালন করছেন খুলনায়। এ কারণে আপাতত দু’জন নিরাপত্তা কর্মী দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো হচ্ছে। তবে এখন বর্ষা মৌসুম হওয়ায় পানি জমে আছে। এ কারণে আপাতত পরিচ্ছন্নতার কাজে বিঘœ ঘটছে। পানি শুকিয়ে গেলে পুনরায় পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হবে।
এদিকে বিটিসিএল-এ কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা এবং কর্মচারী অভিযোগ করেছেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদাসীন। তাদের সুষ্ঠু তদারকির কারণেই বিটিসিএল এর মত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এ হাল হয়েছে। দীর্ঘ বছরেও এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করা কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় আজ বিটিসিএল কার্যালয় এবং চত্বর পুরোটাতেই জরাজীর্ণ ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি তাদের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) বরিশাল এর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শামীম ফকির বলেন, এখানে পানির সমস্যা অনেক আগে থেকে। কম্পাউন্ডের রাস্তা নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যাচ্ছে। এ বিষয়ে হেড অফিসকে চিঠি দিলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বর্ষার কারণে জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা গেলে জঙ্গল পরিষ্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply